-->

লুণ্ঠন বা লোটন ষষ্ঠী ব্রত । লোটনষষ্ঠী ব্রত | Loton Sasthi Brata

লোটন ষষ্ঠী ব্রত হল হিন্দুধর্মের একটি ব্রত যা শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয়। এই ব্রতটি সাধারণত গর্ভবতী মহিলারা পালন করেন। ব্রতকথা অনুসারে, এক সময় এক বাড়িতে এক গর্ভবতী মহিলা বাস করতেন। তিনি ষষ্ঠী দেবীর পূজা করেছিলেন এবং ব্রত পালন করেছিলেন। ব্রতের ফলস্বরূপ, তিনি একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেন। সেই থেকে এই ব্রতটি গর্ভবতী মহিলারা পালন করে থাকেন।

লুণ্ঠন বা লোটন ষষ্ঠী ব্রত


লোটন ষষ্ঠী ব্রত পালনের জন্য, মহিলারা ব্রতকথা শোনেন এবং ষষ্ঠী দেবীর পূজা করেন। তারা চাল, ডাল, ঘি, দুধ, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি দিয়ে ভোগ দেন। ব্রত শেষে তারা ভোগ খায়।

লোটন ষষ্ঠী ব্রত পালনের ফলে মহিলাদের সন্তান সুস্থ এবং সুখী হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়াও, এই ব্রত পালন করলে মহিলাদের ভাগ্য ভাল হয় বলেও বিশ্বাস করা হয়।

লোটন ষষ্ঠী ব্রত পালনের নিয়মগুলি হল:

  • ব্রত পালনের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করুন।
  • একটি নতুন সাদা শাড়ি পরুন।
  • একটি নতুন চুড়ি পরুন।
  • একটি নতুন থালায় চাল, ডাল, ঘি, দুধ, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি দিয়ে ভোগ সাজিয়ে নিন।
  • ষষ্ঠী দেবীর ছবি বা মূর্তি সামনে রেখে পূজা করুন।
  • ব্রতকথা শোনেন।
  • ভোগ খাওয়ার আগে ষষ্ঠী দেবীর কাছে প্রার্থনা করুন।
  • ভোগ খেয়ে দিনটি শেষ করুন।

লুণ্ঠন বা লোটন ষষ্ঠী ব্রত

ব্রতের নিয়ম : 

সধবা মহিলাদেরকেই একমাত্র এই ব্রত পালন করতে হয় কোনো সন্তানহীনা বা বিধবা মহিলাদের এই ব্রত পালন করতে নেই। শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন এই ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রত পালনের নিয়ম হল প্রথমে আলপনা দিয়ে বটের ডাল বসিয়ে তার সামনে ঘট বসাতে হয়। তারপর দই, তেল ও হলুদ বাটা ইত্যাদি দিতে হয় সঙ্গে দিতে হয়। অতিরিক্ত সাতটা ক্ষীরের লোটন মা যষ্ঠীর কোলের কাছে। তারপরে মা ষষ্ঠীকে পূজা করে তাঁকে প্রণাম করে ব্রতকথা শুনতে হয়।

তবে মনে রাখা দরকার যে, সোম, মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার যদি এই ষষ্ঠী পড়ে তাহলে পূজা করতে নেই। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়ম পালন করলেই হয়।

ব্রতের দ্রব্য ও বিধান:

ঘি, তরকারী, আখের গুড়, ফল, ডাব ও মিষ্টি। সন্তানের মা, নিজে পুরোহিতকে দিয়ে এই ব্রতের পুজো করাবে। পুজোর দিন অন্নভোজন করবে না। দিনের বেলায় লুচি, তরকারী ও মিষ্টান্ন খাওয়ায় দোষ নেই। রাত্তিরে ফল, মূল, মিষ্টি ও ডাব খেতে পারে, অন্য কিছু খেতে নেই।

ব্রতকথাঃ

 এক ব্রাহ্মণ পরিবারে বামুন-বামনী তাদের ছয় ছেলে-বউ ও এক মেয়ে ছিলো। তাদের মেয়ে ও সব ছেলেদেরই পুত্রসন্তান হয়েছে। এই দেখে পাড়ার অনেকেই অনেক কথা বলে তাদেরকে হিংসাও করে। তাতে এই পরিবারের কিছু যায় আসেনা, তারা বেশ সুখেই বাস করে। কোনো অভাবও তাদের স্পর্শ করে না। এক বছর শ্রাবন মাসে তাদের একমাত্র মেয়ে তার দুই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসে কিছুদিনের জন্য।

এই বছর শ্রাবন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন অন্যান্য বছরের মতো বামনী তার ছ'বউ ও মেয়েকে নিয়ে ষষ্ঠীপূজায় বসে ও সকল প্রকার নৈবেদ্য, বাটা, দশ প্রকার ফল সবই দিল কিন্তু সোনার লোটন দেওয়ার সময় সে দেখলো সাতটি লোটনের জায়গায় চারটে আছে তিনটে নেই। এই দেখে সে তার মেয়েকে জানতে চায়। মেয়ে বলে যে কদিনের জন্য বাপের বাড়ি এসেছে সে সেগুলি নেবে কেন এগুলি বড় বউ নিয়েছে বলে সে জানায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই তা নিয়েছিলো ও বড়বউ এর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো। এই অপবাদ বড়বউ শোনামাত্র চমকে ওঠে ও সথে সাথে তার এক ছেলের মাথায় হাত রেখে বলে যে সে যদি ওই লোটনগুলি চুরি করে থাকে তাহলে তার সাত ছেলে মারা যাবে। লোটন না পেয়ে তাদের শাশুড়ি ক্ষীরের লোটন তৈরী করে পূজা শেষ করে। বাড়িতে ছেলেরা সব ফিরে এসে সব শুনে বড়বউকে নিন্দা করে। এই ঘটনার পর বড়বউ মনের দুঃখে সেদিন আর কিছু না খেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে আর এই মিথ্যার বিচারের জন্য মা ষষ্ঠীকে ডাকতে থাকে।

কিন্তু পরদিন সকালে হঠাৎ সে দেখে তার সাত ছেলে মৃত। এই দেখে সবাই তো অবাক। তখন তার ননদ বলতে থাকে যে বড় বউ নিশ্চয়ই লোটনগুলো চুরি করেছিলো, তাই তার মিথ্যা দিব্যিতে তার সাত ছেলে মারা গেছে। তখন বড় বউ তার শাশুড়ির পায়ে হাত রেখে পুনরায় দিব্যি করতে গেলে তার ননদ তাকে তা করতে না দিয়ে অকথ্য ভাষাতে ভর্ৎসনা করতে থাকে। বড়বউ তখন আবার ঘরে গিয়ে মা ষষ্ঠীকে ডাকে আর কাঁদে। তখন মা ষষ্ঠী বৃদ্ধার বেশে সেই ঘরে ঢুকে বড়বউকে বলে যে সত্যি হোক বা মিথ্যে হোক সন্তানের মাথাতে হাত রেখে কখনো দিব্যি করতে নেই তাতে সন্তানের পরমায়ু ক্ষয় হয়। এই কথা বলে তিনি তাকে বলল সে যেন যেখানে ষষ্ঠীপূজা হয়েছে সেখানে যায় আর সেখান থেকে পড়ে থাকা বাঁশপাতা নিয়ে ঘটের জলে চুবিয়ে মা ষষ্ঠীর নাম করে সেই মরা ছেলে গুলোর গায়ে ছিটিয়ে দেয় তাহলেই তারা আবার বেঁচে উঠবে। এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বড়বউ তখুনি তাই করলে তার ছেলেরা সব বেঁচে উঠল। সবাই অবাক হয়ে গেল।

এদিকে তার ননদের দুই ছেলে মারা গেল। সে কান্নাকাটি শুরু করল। তখন যেন কে বলে উঠল যে সে নিজে লোটন চুরি করে বড়বউ-এর নামে দোষ দিয়েছে। সে যদি বড়বউ-এর পায়ে ধরে ক্ষমা চায় তবেই তার ছেলেরা বেঁচে উঠতে পারে বড়বউ-এর দয়াতে। এই কথা বলা হয়ে গেলে সবাই খুঁজতে থাকে কে বলল কিন্তু কেউই কাউকে দেখতে পেলনা। তারপর সে বড়বউ- এর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল। বড়বউ সকলের অনুরোধে তাকে ক্ষমা করতে রাজী হল ও বলল মা ষষ্ঠীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলতে যে কখনো আর ঠাকুর দেবতার জিনিস চুরি করবে না তবেই সে ক্ষমা পাবে। এই কথা শুনে পাড়াপ্রতিবেশী সকলের সামনে সে লোটনগুলি ফিরিয়ে দিয়ে বড়বউ-এর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল। তখন বড়বউ সেই বাঁশপাতা দিয়ে ঘটের জল মা ষষ্ঠীর নাম করে সেই মরা ছেলেদের গায়ে ছিটিয়ে দিলো ও তারা বেঁচে উঠল। এরপর সবাই অবাক হল বড়বউকে ধন্যি ধন্যি করল। এরপর বড় বউ ও তার শাশুড়ি, ভাজ, দেওর স্বামী সবাই মিলে মা যষ্ঠীর পূজা মাহাত্ম্য প্রচার করতে থাকল ও দিকে দিকে তা প্রচারিত ও প্রসারিত হলো।

 ব্রতফলঃ

 যে সমস্ত মহিলারা এই পূজা পালন করে থাকেন তাদের সন্তানাদি কখনো অকালে মারা যায় না। তাদের শুভ হয়ে থাকে।

লোটন ষষ্ঠী ব্রত পালন করার জন্য কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এই নিয়মগুলি মেনে চললে ব্রতফল লাভ করা যায়।

নিয়মগুলি হল:

  • ব্রত পালন করার আগে মাথায় তেল দিয়ে স্নান করতে হবে।
  • ব্রত পালন করার সময় সাদা কাপড় পরতে হবে।
  • ব্রত পালন করার সময় ষষ্ঠী দেবীর ছবি বা মূর্তি সামনে রাখতে হবে।
  • ব্রত পালন করার সময় ষষ্ঠী দেবীর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
  • ব্রত পালন করার সময় ভোগ খেতে হবে।
  • ব্রত পালন করার সময় লোভ, হিংসা, ক্রোধ ইত্যাদি খারাপ গুণাবলী পরিহার করতে হবে।
  • ব্রত পালন করার সময় সৎ, ধার্মিক এবং পরোপকারী হতে হবে।

লোটন ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে মহিলাদের সন্তান সুস্থ এবং সুখী হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়াও, এই ব্রত পালন করলে মহিলাদের ভাগ্য ভাল হয় বলেও বিশ্বাস করা হয়।

You May Like Also Also Like This

Post a Comment

0 Comments


Advertisement