-->

পেঁচাপেঁচীর ব্রত Penchapechi Brata | লক্ষ্মীপূজা বা পেঁচাপেঁচীর ব্রত

লক্ষ্মী হলেন একজন হিন্দু দেবী। তিনি ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী।পার্বতী এবং সরস্বতীর সাথে তিনি ত্রিদেবীর একজন। তিনি বিষ্ণুর পত্নী। তার অপর নাম মহালক্ষ্মী ইনি স্বত্ত্ব গুন ময়ী। জৈন স্মারকগুলিতেও লক্ষ্মীর ছবি দেখা যায়। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। 

পেঁচাপেঁচীর ব্রত Penchapechi Brata |  লক্ষ্মীপূজা বা পেঁচাপেঁচীর ব্রত  লক্ষ্মীপূজা বা পেঁচাপেঁচীর ব্রত, জেনে নিন পেঁচাপেঁচীর ব্রত Free Penchapechi Brata Download Ebook |  

লক্ষ্মীপূজা বা পেঁচাপেঁচীর ব্রত 




ব্রতকথা: বহুদিন আগে এক দেশে একটি বাচ্চা ছেলে আর তার বিধবা বাম্নী মা থাকতো। তারা এতো গরীব ছিল যে প্রতিদিন ঠিক মতো খাবারটুকুও খেতে পারত না। ছেলেটির মা প্রতিদিন অন্নের সন্ধানে বের হতো আর ছেলেটি তাদের বাড়ির সামনের বটগাছটার নিচে নিজের মনে খেলা করতো। একদিন ছেলেটা সেই গাছতলায় খেলা করতে করতে দেখলো যে একটা ক্ষীরওয়ালা ভাঁড় ভর্তি ক্ষীর নিয়ে যাচ্ছে। তার সেই ক্ষীর খাওয়ার খুব ইচ্ছে হল তাই সে তার মায়ের কাছে কাঁদতে লাগল ক্ষীর খাবে বলে। কিন্তু তার মা পয়সার অভাবে তাকে ক্ষীর খাওয়াতে পারল না। এই দেখে সেই ক্ষীরওয়ালার খুব খারাপ লাগল। সে ছেলেটিকে বিনা পয়সাতেই একভাড় ক্ষীর দিয়ে চলে গেল।


তারপর ছেলেটা সেই ক্ষীর নিয়ে সেই বটগাছতলায় গেলো। এই গাছে দুটি পেঁচা-পেঁচার ছানা থাকতো। তারা ছেলেটার হাতে ক্ষীর দেখে চীৎকার করতে লাগল। ছেলেটা তখন তাদেরকে নামিয়ে এনে তাদেরকে ক্ষীর খাওয়ালো তারপর অবশিষ্টটুকু নিজে খেলো। সেদিন সন্ধ্যার সময় সেই পেঁচা-পেঁচী এসে তাদের ছানার থেকে সব শুনলো। তারপর থেকে ছেলেটা যখন যা খেতো সেই পেঁচা-পেঁচার ছানাদেরকেও তা খাওয়াতো। তারপর সন্ধ্যায় পেঁচাপেচী বাড়ি ফিরে এলে তাদের ছানারা তাদেরকে সব বলতো এবং আরো বলতো যে তারা যেন ওই গরীব বামনীর দারিদ্র মোচনের চেষ্টা করে। এইভাবে দিন যায়। ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের বৃস্পতিবার বামনী বহুকষ্টে লক্ষ্মীর পূজা করলো। ছেলেটা সেই পুজার প্রসাদ এনে সেই ছানাদের দিলো। সেদিনই রাতে ছানারা জানতে পারলো যে বামনীর পূজাতে নারায়ণ সন্তুষ্ট হয়েছে। এবার ওদের অবস্থা ফিরবে।


পরদিন সকালে ছেলেটা গাছতলাতে এলে পেঁচা-পেটা তাকে সব বলে বুঝিয়ে নিলো এবং বলল, কেউ কিছু জানতে চাইলে বা দিতে চাইলে সে যেন তিল ধুবড়ি ছাড়া আর কিছু না চায়। তারপর তাকে একটা গাছের ডালে চোখ বন্ধ করে বসিয়ে ডালটার দুদিকে দুজনে ধরে তাকে নিয়ে লক্ষ্মী নারায়ণের কাছে গেল। ছেলেটা তাদেরকে প্রণাম করে তিলধুবড়ি চাইল। মা লক্ষ্মী তাকে ধন-দৌলত দিতে চাইল কিন্তু ছেলেটা কিছুই না নিয়ে শুধুমাত্র তিলধুবড়ি চাইল। শেষ পর্যন্ত মা লক্ষ্মী ছেলেটার আবদারে দয়াপরবশ হয়ে তাকে তিলধুবড়ি দিল ও বলে দিলো তারা যেন ওটার সঠিক যত্ন নিয়ে পূজা করে প্রতিদিন। তারপর পেঁচা-পেঁচী সেই ছেলেটাকে আবার একই রকম ভাবে ফিরিয়ে আনল। ছেলেটা বাড়ী ফিরে মাকে সব বলল তখন তার মা খুব যত্ন করে ঘর পরিষ্কার করে আলপনা দিয়ে ঘট পাতল ও সেই তিলধুবড়ির পূজা করতে লাগল। তারপর আস্তে আস্তে তাদের অবস্থা ফিরতে লাগল।


ক্রমশ তাদের প্রচুর ধন-সম্পত্তি হল। এই দেখে সেই দেশের রাজা ভয় পেলো। তাকে ছাপিয়ে যাবে এইভয়ে রাজা লোক লাগাল তাদের পিছনে। জানতে পারল তিলধুবড়ির ঘটনা। তারপর একদিন রাজা সদলবলে গিয়ে সেই তিলধুবড়ি চুরি করে আনতে গেলো। কিন্তু মা লক্ষ্মীর মায়ার ছলে সেই তিলধুবড়ি রাজার কাছে না থেকে লক্ষ্মীর কাছেই ফিরে গেলো। এই ঘটনার পর থেকে বামনীর সেই দরিদ্র অবস্থা ফিরে এলো। তখন পেঁচা-পেঁচাকে আবার তার ছানারা ধরল ছেলেটাদের দরিদ্র অবস্থা ঘোচানোর জন্য। বহু অনুরোধে তারা আবার ছেলেটাকে মা লক্ষ্মীর কাছে নিয়ে গেলো। ছেলেটা গিয়ে আবার তিলধুবড়ি চাইল। কিন্তু যেহেতু তারা আগের বারে তিলধুবড়িকে সফরে আটকে রাখতে পারেনি তাই এবারে আর তা দিতে চাইল না। তারপরে ছেলেটার বহু অনুনয় বিনয়ে আর একবারের জন্য মা লক্ষ্মী তা দিতে রাজী হল। ছেলেটা এবার তা নিয়ে এসে আবার সযত্নে তা পূজা করতে লাগল। দেখতে দেখতে আবার তারা বড়লোক হয়ে গেলো। প্রচুর ধন-সম্পত্তির অধিকারী হল। রাজা তখন আবার ভয় পেলো। এবার সে তার একমাত্র কন্যাকে সেই ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে দিলো। দেখতে দেখতে ছেলেটা বড় রাজায় পরিণত হলো। পেঁচা-পেঁচাও তার ছানাদের খাবারেরও স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিলো। তার মা রোজ ভক্তিভরে মা লক্ষ্মীর পূজা করতো। এইভাবে বহুদিন পর বৈকুণ্ঠ থেকে পুষ্পরথ এলো বামনীকে নিয়ে যাবে বলে। তখন বামনী তার বউমাকে বলে গেলো যে সে যেন প্রতিদিন যত্ন করে তিলধুবড়ির পূজা করে এবং ভাদ্র, কার্ত্তিক, পৌষ এবং চৈত্র মাসে মা লক্ষ্মীর পূজা করে। বেলা পর্যন্ত বিছানায় পড়ে না থেকে যেন ভোরে উঠে ঘর-দুয়ারে কাঁটা জল দেয়। কারুর সাথে যেন চেঁচিয়ে কথা না বলে। সন্ধ্যা হলেই যেন ঠাকুর ঘরে সন্ধ্যে প্রদীপ জ্বালায়। এই বলে বামনী বৈকুণ্ঠে চলে যায়। তারপর ছেলেটা খুব বড় করে প্রচুর ব্রাহ্মণ খাইয়ে মায়ের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করলো। শাশুড়ীর কথা মতো তার বউ সব নিয়ম মেনে চলতে লাগল। দেখতে দেখতে তাদের ছেলেমেয়ে হল তাদেরও বিয়ে হল সন্তানাদি হল। সুখেই চলতে লাগল সংসার। এরপর তাদের আবার বৈকুণ্ঠে যাবার সময় হলে তারাও ছেলেমেয়েদের বউদের লক্ষ্মীপূজা করার কথা বলে বৈকুণ্ঠে চলে গেলো। এইভাবে পৃথিবীতে পেঁচা-পেঁচীর এই পূজা প্রচারিত ও প্রসারিত হলো।


ব্রতফল: ভাদ্র মাসে এই পূজা করলে সমস্ত নারীর মান, যশ, ভাগ্য সবকিছু সুপ্রসন্ন হয় ও তারা পরম সুখী হয়ে থাকে।

You May Like Also Also Like This

Post a Comment

0 Comments


Advertisement