বিপত্তারিণী হলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পূজিত এক হিন্দু দেবী। তিনি দেবী সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গা(পার্বতী)-এর ১০৮ অবতারের অন্যতম। হিন্দুরা মূলত বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পূজা করেন। আষাঢ় মাসের রথ থেকে উল্টোরথের মধ্যে মঙ্গলবার ও শনিবার-এ হিন্দু মহিলারা বিপত্তারিণী ব্রত পালন করেন।
বিপত্তারিণীর ব্রতকথা
ব্রতের নিয়ম—আষাঢ় মাসের শুক্লা তৃতীয়া থেকে নবমী তিথির মধ্যে যে কোন শনিবার বা মঙ্গলবারে এই ব্রত করিতে হয়। যথারীতি ঘট স্থাপন করে, পুরােহিত ব্রাহ্মণের দ্বারা বিপত্তারিণীর পূজা করাতে হয়। সাধ্যমত তাকে দান ও দক্ষিণা দিতে হয়।
ব্রতের উপকরণ—ঘট, আম্রপল্লব, সশীষ ডাব, নৈবেদ্য একটি, তেরাে রকম ফুল, তেরােরকম ফল দু'ভাগ করে কেটে দিতে হয়। একটি চুবড়িতে তেরােটি গােটাফল, তেরাে গাছি লালসূতা, তেরােটি দূর্বা, তেরােটি পান ও তেরােটি সুপারী দিতে হয়।
অতিরিক্ত নিয়ম—ব্রতের আগের দিন হবিষ্য বা নিরামিষ আহার করতে হয়। ব্রতের দিন পূজা-শেষেব্রতকথা শুনে, সেই আসনে বসেই ফল-মূল ও মিষ্টান্ন, কিংবা লুচি-পুরি খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়।লাল সুতােয় তেরােটি গাঁট ও দূর্বা দিয়ে পুরুষদের ডান হাতে এবং মেয়েদের বাম হাতে বাঁধতে হয়। পুরােহিতকে ফল-মূল ও যথাসাধ্য দক্ষিণা দিতে হয়।
ব্ৰতের ফল- এই ব্রতপালন করলে সংসারের সকল বিপদ কেটে যায়। ব্রতকথা—বিদর্ভ দেশে এক রাজা ছিলেন। তাঁর রাণী খুব ভক্তিমতী ও স্বামীভক্তি-পরায়ণা। রাণী নিষ্ঠা-সহকারে বিপত্তারিণীর ব্রত করলেন। এক মুচিনীর সঙ্গে তিনিসই পাতিয়েছিলেন। মুচিনীকে তিনি প্রায়ই নানারকম ফলও খাদ্যদ্রব্য উপহার দিতেন। মুচিনী খুব গরীব, তবু তার খুব ইচ্ছা রাণীকে কিছু দেয়। রাণী রােজই বলেন যে, একদিন তােমার কাছ থেকে চেয়ে নেব। কিন্তু চাওয়া আর হয় না। হঠাৎ একদিন রাণী বললেন—তােমরা তাে গাে-মাংস রান্না কর। একদিন একটু নিয়ে এসাে, দেখবাে কি রকম।
মুচিনী রাণীর কথা শুনে খুব খুশী। খুব যত্ন করে সে গাে-মাংস রাঁধলাে। তারপর কাপড় চাপা দিয়ে রাজবাড়ীতে এনে রাণীকে বললে-গাে মাংস এনেছি। রাণী তাে আর খাবেন না, শুধু দেখবেন। তাই যত্ন করে ঢাকা দিয়ে রাখলেন। এদিকে হয়েছে কি, মুচিনী গােপনে গাে-মাংস আনলাে বটে, কিন্তু রাজবাড়ীর একটি চাকর তা দেখতে পেয়ে গেল।
সে রাজাকে এসে সব কথা বলতেই রাজা এসে রাণীকে বললেন-মুচিনী তােমাকে কি দিয়ে গেছে? যদি আপত্তিকর কিছু সে রেখে গিয়ে থাকে, তাহলে আমি তােমার শিরশ্ছেদ করবাে। রাণী বিপদে পড়ে, ভয়ে কাদতে কাঁদতে একমনে মা বিপত্তারিণী দুর্গাকে ডাকতে লাগলেন। মা বিপত্তারিণী দুর্গা ভক্তের আকুল কান্নায় স্থির থাকতে পারলেন না, রাণীর কানে কানে বললেন-দেখগে সব ফুল হয়ে গেছে।
রাণী তখন রাজাকে সেই ফুল এনে দেখালেন। রাজা চাকরকে তিরস্কার করলেন। মা বিপত্তারিণী দুর্গার কৃপায় রাণীর বিপদ কেটে গেল। সেই থেকে এই ব্রতের কথা চারিদিকে প্রচার হলাে।
-অথ বিপত্তারিণীর ব্রতকথা সমাপ্ত
Download: বিপত্তারিণীর ব্রতকথা PDF সহ
You May Like Also Also Like This
0 Comments